সারাংশ
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির উচ্চহার (৯.৯৭%), বিনিয়োগ স্থবিরতা এবং বাজেট ঘাটতির প্রসার জনগণের ক্রয়ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ব্যাংকিং খাত ও বৈদেশিক বিনিয়োগ ঘুরে দাঁড়াতে না পারায় অর্থনীতির সামনে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। অর্থনৈতিক নীতিতে আরও কার্যকরী সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এখন প্রবলভাবে দৃশ্যমান।
মূল পয়েন্টসমূহ
- ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে ৯.৯৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে
- বাজেট ঘাটতি প্রায় ৩,২৩,২০০ কোটি টাকা
- বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি স্থবির, বৈদেশিক বিনিয়োগ ৯৬৬ কোটি ডলারে নেমেছে
- ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও নজরদারির অভাব প্রকট
- কাঠামোগত সংস্কার ও আধুনিকায়ন ছাড়া সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি একাধিক সূচকে চাপে রয়েছে। সদ্য প্রকাশিত অর্থনৈতিক তথ্য অনুযায়ী দেশের মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে ৯.৯৭ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গতবছরের তুলনায় সুব্যবস্থাপনাহীন পর্যায়ে রয়ে গেছে। এর ফলে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্থবির বিনিয়োগ পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩,২৩,২০০ কোটি টাকা, যা সরকারের রাজস্ব আয় ও খরচের ভারসাম্যে বড় ধরনের চাপ তৈরি করছে। একদিকে সরকারের উন্নয়ন খাতে ব্যয় কমেছে, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পকে সংক্ষেপ করা হয়েছে।
সমস্যার আরেকটি বড় পক্ষ হলো ব্যাংক ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের দুর্বলতা। স্মার্টফোন ঋণ সুবিধা, ইলন মাস্কের স্টারলিংক পারমিশনসহ নানা ঘোষণা থাকলেও প্রকৃত বিনিয়োগ প্রবাহ স্থবির রয়ে গেছে। বিএমই তৈরি পোশাক ও রপ্তানি খাতে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) কমে ৯৬৬ কোটি ডলারে ঠেকেছে, যেখানে প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ১৯.৯৮ শতাংশ।
জাতীয় অর্থনীতিতে অর্থসংস্থানের চাপ বেড়েছে ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতায়ও। গত বছর ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নির্ধারিত হয়েছে ১,২৬০ কোটি টাকায়, যা ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম ও নজরদারির অভাব স্পষ্ট করছে।
অর্থনীতির বর্তমান চাপের কথা স্বীকার করে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ড. সাইফুল আলম বলেন, 'যথাযথ নীতিগত সিদ্ধান্ত ছাড়া বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের পথ কঠিন। জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশই এখন বড় চাহিদা।'
তবে, সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে কাঠামোগত সংস্কার, কারখানা আধুনিকীকরণ, প্রযুক্তি গ্রহণ এবং বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা গেলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও রাজস্ব বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে; যদিও এ বিষয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা।
সার্বিকভাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ বাড়লেও, সঠিক নীতির বাস্তবায়নে সংকট কাটিয়ে উঠার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।