সারাংশ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক দিক থেকে নজিরবিহীন পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব, ছাত্র আন্দোলনের উত্থান ও বহুজাতিক কোম্পানিদের দুশ্চিন্তা—সব মিলিয়ে দেশ আজ এক নতুন সন্ধিক্ষণে।
মূল পয়েন্টসমূহ
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ফলে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণ-আন্দোলনের উত্থান।
- ছাত্রনেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ ও নতুন সংবিধানের দাবি তুলেছে।
- ১৫ বছর পর পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সংলাপ, যা বিস্তৃত আঞ্চলিক বাস্তবতার ইঙ্গিত।
- টেক্সটাইল খাতে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর রফতানি বিপুল ঝুঁকিতে (৯০% বাজার) পড়েছে।
- বিচার বিভাগ ও পুলিশ-সামরিক খাতে জরুরি সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণের ওপর বিশেষজ্ঞদের জোরালো পরামর্শ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ২০২৫ সালে একটানা ঝড়ের মুখে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশজুড়ে ছাত্রদের নেতৃত্বে ব্যাপক প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের ফসল জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ, যা গত কয়েক দশকের আওয়ামী লীগ-বিএনপির দ্বৈত আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে। নতুন দলের নেতৃত্বে থাকা নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, “আমরা নতুন সংবিধান ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার মাধ্যমে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির একটি মূল লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও প্রতিষ্ঠানের সংস্কার। এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘এই জনজাগরণ বৃহৎ সংস্কার ও গণতন্ত্রের নতুন উন্নয়নের ইঙ্গিত বহন করে।’
একই সময়ে বাংলাদেশের কূটনীতি নতুন মোড় নিচ্ছে—১৫ বছর পর পাকিস্তানের সাথে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে থেকেছেন নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের সাথে প্রচলিত ঘনিষ্ঠতা থেকে বেরিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তির ভারসাম্যে পরিবর্তন আসতে পারে।
এই অস্থিরতায় সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছে বহুজাতিক টেক্সটাইল কোম্পানিগুলো, কারণ দেশটির মোট রফতানির ৯০ শতাংশই এই খাত নির্ভর। এইচএন্ডএম, লেভি স্ট্রস এবং ইন্ডিটেক্সের মত গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলো স্বীকার করছে, “বাংলাদেশে অনিশ্চয়তা গোটা সাপ্লাই চেইনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।” অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, অনিশ্চয়তার এই আবহে দ্রুত কাঠামোগত সংস্কার ব্যর্থ হলে বাজার আরও অস্থিতিশীল হতে পারে।
এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ, ভাঙচুর, এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘন ঘন ঘটছে, বিশেষত ঢাকার উত্তরা ইস্ট থানায়; এতে আইন-শৃঙ্খলা চরম চ্যালেঞ্জের মুখে। মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্লেষকরা সরকারকে দ্রুত নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবিধানে সংশোধনী সংক্রান্ত সংকটও নতুন মাত্রা পেয়েছে—সুপ্রিম কোর্ট ১৫তম সংশোধনীর কিছু অংশকে অবৈধ ঘোষণা করেছে, যার ফলে নারী সংরক্ষিত আসন এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন ফের আলোচনায় এসেছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ডা. হারুন অর রশিদ মন্তব্য করেছেন, “এই সংকট সামাল দিতে অবিলম্বে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সংস্কার এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মতো গঠনমূলক পদক্ষেপ দরকার।”
বাংলাদেশ এখন এক অজানা ভবিষ্যতের দ্বারপ্রান্তে—এই উত্তাল পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে, নাগরিকদের অংশগ্রহণ ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারই হতে পারে একটি নতুন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের মূল চাবিকাঠি।