সারাংশ
২০২৪ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.৮% এ নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক, যেখানে উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়, বৈদেশিক মুদ্রা সংকট, ব্যাংকিং দুর্বলতা এবং আমদানি-রপ্তানিতে চাপ দেশটির অর্থনৈতিক গতি কমিয়ে দিয়েছে। তবে, কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত থাকলেও মূল চ্যালেঞ্জগুলো থেকে উত্তরণেই ভবিষ্যৎ ঝুঁকি কমবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
মূল পয়েন্টসমূহ
- ২০২৪ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৫.৮%-এ
- মূল্যস্ফীতির হার জুনে ১২.৯২ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দশকের সর্বোচ্চ
- বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে
- ব্যাংকিং খাত ও শুল্কনীতিতে সংস্কারের তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা
- কিছু খাতে স্থিতি থাকলেও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি কমাতে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন
২০২৪ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমেছে ৫.৮ শতাংশে, যেখানে ২০২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬%-এর ওপরে। মূল্যস্ফীতির লাগাতার চাপ, ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা এবং ডলার সংকট অর্থনৈতিক স্থিতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, 'মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল করে তুলছে।' গত জুনে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ১২.৯২ শতাংশে পৌঁছায়, যা বিগত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং ব্যাংক ঋণের সুদ হার বৃদ্ধির কারণে উৎপাদনশীল খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক বছর আগে যেখানে ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার, তা নেমে ১৯-২০ বিলিয়ন ডলারে এসেছে। বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে এবং রপ্তানির গতি মন্থর হওয়ায় কর্মসংস্থানের ওপরও চাপ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, 'ব্যাংকিং খাতের সংস্কার ও রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনায় দ্রুত উদ্ভাবনী পরিবর্তন আনতে হবে।'
তবে চ্যালেঞ্জের মাঝেও কিছু ইতিবাচক দিক আছে। কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে স্থিতি কিছুটা বজায় থাকায় খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে দুর্দশা বাড়েনি। সরকারের পাশাপাশি আইএমএফ-এর সহযোগিতায় কর্তৃপক্ষ মুদ্রা বিনিময় হারে নমনীয়তা আনছে এবং আর্থিক অনিয়ম কমাতে ব্যাংকগুলোর ওপর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য বিশেষজ্ঞরা অবকাঠামো উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর আরও জোর দিতে আহবান জানিয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও টেকসই ও উদ্ভাবনী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোই সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।