সারাংশ
সাম্প্রতিক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রিপোর্টে দেখা গেছে, বৈশ্বিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনের অগ্রগতির পাশাপাশি নানা ধরনের নতুন চ্যালেঞ্জও সামনে আসছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক-সামাজিক সূচকে উন্নতি করলেও, দারিদ্র্য ও সামাজিক বৈষম্যের ঝুঁকি এখনও প্রবল। উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার এই সমীকরণ বিশ্বের ভবিষ্যৎ পরিচালনার মূল চাবিকাঠি হয়ে উঠেছে।
মূল পয়েন্টসমূহ
- ২০২৩ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে ২৭% এ নেমেছে (WEF রিপোর্ট)
- বাংলাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে
- ২০২৯ সালের মধ্যে বিশ্বে ১০০ কোটি মানুষের চরম দারিদ্র্যের শঙ্কা (UNDP পূর্বাভাস)
- বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য
- টেকসই উন্নয়নের জন্য নীতিনির্ধারক ও বিনিয়োগকারীদের জোর দিতে হবে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নে
বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান অস্থিরতা, উদ্ভাবনের অগ্রগতি এবং দারিদ্র্যের উদ্বেগ—এ তিনটি বিষয় বছরের আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক WEF (World Economic Forum), UNDP এবং বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক। WEF-এর মতে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের হার মাত্র ২৭% ছিল, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কম। তার চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ—জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP) অনুযায়ী, ২০২৯ সালের মধ্যে ১০০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্য সীমায় পৌঁছে যেতে পারেন।
বাংলাদেশ বিষয়ক প্রতিবেদনে এসেছে আশাব্যঞ্জক খবর। ভারতের সমৃদ্ধ প্রতিবেশী এই দেশটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছে। পরিসংখ্যানগতভাবে, সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে এগিয়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে উদ্ভাবন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির দিকে এগিয়ে চলেছে। WEF রিপোর্ট বলছে, উন্নতমূলক উদ্যোগ এবং দক্ষ মানবসম্পদের সংযোগ বাংলাদেশকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আরও সামনের দিকে এগিয়ে দিয়েছে।
তবে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, "বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন সামাজিক ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জও সামনে উঠে আসছে। এই চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম হলো—উন্নত-উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।" বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে (GII) দেখা গেছে, ১৩২টি দেশের মধ্যে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ১২টি দেশ উদ্ভাবনে ধীরগতির মুখোমুখি হয়েছে। যদিও গবেষণা বলেছে, ইরানসহ উন্নয়নশীল কিছু দেশ চমকপ্রদ অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বাংলাদেশের বিষয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন বলছে—বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনের কৌশল আন্তর্জাতিক মহলে ইতিবাচক প্রতিচ্ছবি ফেলেছে। সরকারি প্রতিনিধি দলের মতে, "আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও দীর্ঘমেয়াদি পলিসি পরিকল্পনা বজায় থাকলে ২০৩০-এর মধ্যেই আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব।"
তবে চরম দারিদ্র্য ও সামাজিক বৈষম্যের ঝুঁকি এড়িয়ে যেতে হলে দেশের মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও প্রযুক্তি খাতে আরও বিনিয়োগ জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। UNDP এক গবেষণায় সতর্ক করেছে, "আপামর জনসাধারণের ন্যায্য অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক নীতি নিশ্চিত না হলে, সামাজিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।"
সব মিলিয়ে, ২০২৫-এর দিগন্তে দাঁড়িয়ে নিঃসন্দেহে বলা যায়—উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য যুগোপযোগী অর্থনৈতিক নীতি, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও উদ্ভাবনের সমন্বয়ে টেকসই অগ্রগতির দিশা নির্ধারণ করাই এখন সময়ের দাবি।