সারাংশ
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত সামগ্রিক উন্নয়নের পথে বিভিন্ন কাঠামোগত ও আধুনিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিএসএমএমইউ প্রদত্ত গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা—সবখানেই অভিগম্যতা ও মানের তারতম্যের সমস্যা প্রকট। নীতি ও ব্যবস্থাপনা খাতে উন্নতি এবং আধুনিকায়নের পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মূল পয়েন্টসমূহ
- বিএসএমএমইউ গবেষণায় প্রকাশ, স্বাস্থ্যখাতে বৈষম্য ও কাঠামোগত ঘাটতির সমস্যা প্রকট
- অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও চিকিৎসা সেবার হালনাগাদেও অঞ্চলভেদে সেবা-জটিলতা বিদ্যমান
- জলবায়ু পরিবর্তন, অসংক্রামক রোগ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জ সম্প্রসারিত হচ্ছে
- মানসম্মত ডাক্তার, প্রযুক্তি এবং ওষুধের স্বল্পতায় গ্রামীণ ও প্রান্তিক মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে
- স্বাস্থ্যখাতের টেকসই ও সমন্বিত পরিকল্পনার ওপর বিশেষজ্ঞদের গুরুত্বারোপ
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বহুমাত্রিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিএসএমএমইউ-এর এক সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান, সুযোগ-সুবিধা ও সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য দিন দিন আরও স্পষ্ট হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, 'দেশের প্রান্তিক মানুষ, শহুরে দরিদ্র, এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণিও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পেতে হিমশিম খাচ্ছে।'
গবেষণার বড় অংশজুড়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে বৈষম্য, শিক্ষা, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত ঘাটতির বিষয়টি উঠে এসেছে। ২০২৫ সালের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএসএমএমইউ একটু আধুনিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনমুখী স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে, কারণ বর্তমানে 'অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট চালু হলেও, অনেক অঞ্চলে জটিল রোগের চিকিৎসা বিশেষভাবে সীমিত।'
বিশেষজ্ঞদের মতে, নব্বইয়ের দশকের পর থেকে স্বাস্থ্যখাতের বাজেটে কিছুটা বৃদ্ধি এলেও, গবেষণা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ে নাক-কান-গলা এবং হৃদরোগের আধুনিক কেন্দ্রের স্বল্পতা একটি বড় সমস্যা। একইসঙ্গে, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে দক্ষ ডাক্তার ও ঔষধের ঘাটতি প্রায়ই সাধারণ রোগীদের শহরমুখী করতে বাধ্য করছে।
স্বাস্থ্য-নীতি বিশ্লেষক মুশফিকুর রহমান বলেন, 'ইনক্লুসিভ হেলথ কেয়ার নিশ্চিত করতে হলে সমন্বিত পদক্ষেপ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার।' জলবায়ু পরিবর্তন–সম্পর্কিত হুমকি, অপুষ্টি, অসংক্রামক রোগ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জ—সবকিছুই এখন পরিচালনার অন্তর্ভুক্ত। গবেষণায় আরও জানানো হয়েছে, বর্তমান স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থার সুষ্ঠু সংযোজন, মানুষের স্বাস্থ্য জ্ঞানের প্রবৃদ্ধি এবং চিকিৎসকদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সংস্থাগত দুর্বলতা, বাজেট বরাদ্দে অনিয়ম এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা-ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে গণমুখী সংস্কার জরুরি। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, সমন্বিত কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র আরও কার্যকর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সবশেষে, গবেষণা সুপারিশ করে, 'জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়নের জন্য পরিকল্পিত বাজেট বণ্টন, স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপরে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।'